স্ত্রী একটা সহজ শব্দ হলেও স্বামী ব্যক্তিটির কাছে স্ত্রী হয়ত বেশ দুর্বোধ্য বা কঠিন মনের একজন। যার সাথে সারাজীবন বাস করেও মাঝেমধ্যে সম্পর্কটা সহজ হয়ে ওঠে না। স্ত্রী হলেন জীবনসঙ্গী, অর্ধাঙ্গীনী, পরামর্শদাতা, প্রেরণাদাত্রী, বন্ধুসম। যিনি শক্তহাতে সংসারের হাল ধরে রাখেন।
স্ত্রীকে নিয়ে এত কথার কারণ কি ভাবছেন? কারণ স্ত্রীকে প্রশংসা করার দিনটা মাত্রই চলে গেলো। আগে ভাবতাম এসব দিবসের কী দরকার! এখন মনে হয় অবশ্যই দরকার আছে। স্ত্রীর অবদান সবসময় চোখে পড়ে না। কিন্তু তার নীরব ভালোবাসা, ত্যাগ আর দায়িত্ব কারো অস্বীকার করার সাধ্য নেই। তাই বছরে অন্তত একটি দিন রাখা হয়েছে তার অবদানের জন্যই।
একটু নেগেটিভ কথা বলে নিই এই ফাঁকে। অনেক স্বামীই মনে করেন যে, স্ত্রীর আবার প্রশংসা করার কি আছে! অনেকে ইগোর কারণেও স্ত্রীর কোনো প্রশংসা করতেও চান না। কখনো আবার অন্যদের সামনে স্ত্রীকে ছোট করতেও পছন্দ করেন। কেন করেন সেটাও একটা প্রশ্ন। এখন মনে হতে পারে আমি বুঝি স্বামীদের বিপক্ষে। ব্যাপার তা নয়। কথা প্রসঙ্গে কথাগুলো বলা।
মানতেই হবে যে সংসার রমনীর গুনেই সুখী হয়। স্ত্রীর চাওয়া তার স্বামীটি যেন তার সব অবদান মনে রেখে তার প্রশংসা করে। তার পরিবার যেন তাকে বুঝায়- তুমি ছাড়া আমরা অসম্পূর্ণ। এই দিবসের দিনে শুধু না, স্ত্রীকে সাধুবাদ জানাতে হবে সবসময়। সামনাসামনি প্রশংসা করতে দ্বিধা হলে অন্য বিভিন্ন উপায়েও চেষ্টা করতে পারেন।
এই যেমন ধরুন, স্ত্রীর প্রতিদিনের রান্নার প্রশংসা করে দেখুন। এতে সে সবচেয়ে খুশী হয়। অনেকে আছেন খেতে ভালো না হলে সেটা ধরে বসেন। সেটা না করে ভালোটার প্রশংসা করুন। সবচেয়ে ভালো হয় অবসরে স্ত্রী এবং পরিবারের জন্য পছন্দের কোনো রান্না করলে। সেই সাথে একটু হাতে হাতে তার কাজেও সাহায্য করেন।
মাঝেমধ্যে তাকে টুকটাক উপহার দিন। কখনো বই, লেখার খাতা, তার রান্নার জন্য বাসনপত্র, সাজগোজের কোনো জিনিসপত্র। কখনো আলাদা সময় বের করে ঘুরতে নিয়ে যান। বিশেষ দিনগুলোতে সারপ্রাইজ দিন।
স্ত্রীকে সুন্দর দেখতে লাগলেও সেটি বলুন। নিজের স্ত্রীকে সুন্দর বলতে তো লজ্জা সংকোচের কিছু নেই। নিজেকে সবসময় পরিপাটি সুন্দর করে রাখার অনুপ্রেরণা দিন। তার পছন্দের, শখের কাজ এবং যোগ্যতার জায়গায় উৎসাহ দিন। কারণ স্বামী-স্ত্রী সবসময় একে অন্যের শক্তি। আপনি তার ভালো বন্ধু, শ্রোতা সেটা বুঝান। সংসারে তার মতামতের গুরুত্ব দিন।
অনেকে মনে করেন সংসারের কিছু নির্দিষ্ট কাজের বাইরে স্ত্রীর বোধহয় আর কিছু না জানলেও চলে। কিন্তু সেটা ভুল। তার সাথে সব বিষয়ই শেয়ার করা উচিৎ। ঘরের বাইরেও যেকোনো ঘটনা বা সমস্যার বিষয়েও তার কাছে না লুকিয়ে আলোচনা করুন।
স্ত্রীর পরিবারকে প্রাধান্য দিন, সম্মান করুন। আপনার পরিবারের কেউ আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ করলে আপনি অবশ্যই তার পক্ষের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। আপনার সন্তান কখনো মায়ের বিপক্ষে গেলেও সেই পরিস্থিতিতে স্ত্রীর পক্ষে থাকুন।
কখনো স্ত্রীকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন না। কখনো বলতে যাবেন না যে কিইবা করো সারাদিন। কর্ম থেকে ফিরে ফোন হাতে নিয়ে না বসে স্ত্রীর সাথে সুখের-দুঃখের আলাপ করুন। আর হ্যাঁ, মনে রাখবেন যে স্ত্রীর প্রশংসা করলে সম্মান আর ভালোবাসা দুটোই বাড়ে। তাই শুধু একদিন নয়, প্রতিদিন তার প্রশংসার পাশাপাশি তাকে মূল্যায়ন করে পাশে থাকুন।


Leave a Reply